পুঁজিবাজারে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে নীতিমালা শিথিল করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গঠন করা হয়েছিল প্রতিটি ব্যাংকের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল।
কিন্তু নীতিমালা শিথিলের প্রায় ৮ মাস পার হতে চললেও ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১৮টি ব্যাংক এগিয়ে এসেছে। ব্যাংকগুলো এ তহবিল পেতে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু বাস্তবে আলোচ্য ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে মাত্র ৫৭৬ কোটি টাকা। বেশির ভাগ ব্যাংকের হাতে বাড়তি বিনিয়োগযোগ্য তহবিল থাকলেও বিনিয়োগ করা হচ্ছে না।
জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে প্রত্যেক ব্যাংকের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ ছাড় দিয়ে এ জন্য দু’টি সার্কুলার জারি করা হয়। সার্কুলার দু’টিতে প্রতিটি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত তারল্য সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়। ব্যাংকগুলো তাদের ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য এ ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে পারবে। ।
প্রথম সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ (২০১৮ সংশোধিত) এর ১২১ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত পন্থায় প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে পুঁজিবাজারে প্রতিটি তফসিলি ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকে পাঁচ বছরের জন্য একই আইনের ২৬(ক) ধারায় বর্ণিত পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগ হিসাবায়নের আওতাবহির্ভূত রাখা হবে।
পাশাপাশি আলোচ্য পরিমাণ বিনিয়োগ ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩৮ এর প্রথম তফসিলের অধীন আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতির নির্দেশনার ৪(খ) ক্রমিকে বর্ণিত বছর শেষে বাজারভিত্তিক পুনঃমূল্যায়ন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য বিষয়বস্তুর পরিপালন হতেও পাঁচ বছরের জন্য অব্যাহতি প্রদান করা হবে।
দ্বিতীয় সার্কুলারে ব্যাংকগুলোর তহবিল গঠন সম্পর্কে বলা হয়, ২০০ কোটি টাকার তহবিল থেকে পাঁচ বছরের জন্য অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলো নিজেরা, অথবা তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান যেমন, মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে।
২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের জন্য ব্যাংকগুলো নিজস্ব উৎস থেকে, অথবা তাদের হাতে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ সংগ্রহ, অথবা প্রথমে নিজ উৎস থেকে তহবিল গঠন করে পরে রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকার তহবিল সংস্থান করতে পারবে।
তবে এ ২০০ কোটি টাকা পাঁচ বছরের জন্য ব্যাংকগুলোর ধারণকৃত শেয়ারের নির্ধারিত সীমা অর্থাৎ ২৫ শতাংশের আওতামুক্ত থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে ধার নিলে রেপোর সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৫ শতাংশ। ৯০ দিন পরপর এ তহবিলের মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়াতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করেছিল এর মাধ্যমে বর্তমানে ৫৭টি ব্যাংক সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে পারবে। এতে পুঁজিবাজারে টাকার সমস্যা অনেকাংশেই কেটে যাবে। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এরপরও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগমুখী হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এ পর্যন্ত মাত্র ১৮টি ব্যাংক এগিয়ে এসেছে। তারা ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার তহবিল ব্যবহারের জন্য আবেদনও করে। কিন্তু বাস্তবে বিনিয়োগ করেছে ৫৭৬ কোটি টাকা। করোনার কারণে মনিটরিং ব্যবস্থায় শিথিলতার কারণে ব্যাংকগুলোকে তেমন নির্দেশনাও দেয়া যাচ্ছে না বলে ওই সূত্র জানায় ।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল সোমবার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারের পতন ঠেকানোর দায়িত্ব ব্যাংকগুলোর নয়। ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধ রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে আর শেয়ারের দাম আরো কমে গেলে এর দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংক নেবে না। এটি ব্যাংকগুলোকেই বহন করতে হবে। আর সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ খাতে একজন সচেতন ব্যাংকার বিনিয়োগ করতে পারে না। এ কারণে তারা বিনিয়োগমুখী হচ্ছেন না।
অপর দিকে, সামনে ব্যাংকগুলোর ডিসেম্বর ক্লোজিং রয়েছে। পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকানো না গেলে ব্যাংকগুলোর লোকসান আরো বেড়ে যাবে। আর লোকসান বাড়লে ব্যাংকগুলোর মুনাফা দিয়ে প্রভিশন করতে হবে। এতে ব্যাংকের নিট আয় কমে যাবে। যার দায়ভার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকেই বহন করতে হয়। এ কারণে জেনেশুনে ব্যাংকগুলো এখনই ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করবে না।
Leave a Reply